বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৭:৫৬ পূর্বাহ্ন

দ্বিধায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা : উপসাগরে উত্তেজনা

দ্বিধায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা : উপসাগরে উত্তেজনা

স্বদেশ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে গত শুক্রবার ইরাকে গুপ্ত হামলা চালিয়ে ইরানি জেনারেল কাসেম সুলেইমানিকে হত্যা করা হয়। এরপর বিশ্বরাজনীতি উত্তাপ ছড়াচ্ছে। অনেকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগাম বার্তা দিচ্ছেন। চীন-রাশিয়া নিন্দা জানালেও সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। সবচেয়ে হিসেবি, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা। ইউরোপীয় মিত্ররা অভিযানের পক্ষে বললেও যুদ্ধ বিস্তৃতির আশঙ্কায় উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও গালফ অঞ্চলের মিত্ররা হত্যাকাণ্ডেরই নিন্দা জানিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের প্রতিশোধ কখনো সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে হবে না। মিত্রদেরই ভোগ করতে হবে। এজন্য অবস্থানের ক্ষেত্রে তারা দ্বিধায় রয়েছে।
ব্রিটেন ও ফ্রান্স উত্তেজনা না বাড়াতে অনুরোধ করেছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেন, ‘আমরা ফের সংঘাত চাচ্ছি না।’ অবশ্য ট্রাম্পের বন্ধু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এখনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। গার্ডিয়ান বলছে, উপসাগরীয় উত্তেজনায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্যারিবিয়ানে হলিডে সফর সংক্ষিপ্ত করেছেন। কিন্তু তার নিশ্চুপ থাকা সমালোচিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, ব্রিটেনসহ ইউরোপীয় মিত্রদের সাড়া মিলছে না। এরই মধ্যে এ সপ্তাহে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিউ ইয়র্ক সফরে যাচ্ছেন। হরমুজ প্রণালী থেকে দুটি ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজও ফেরত আনা হয়েছে। ফ্রান্সের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যামেলি দি মনচালিন বলেন, ‘ভয়ানক বিশ্বের দিকে চলছি। সামরিক উত্তেজনা সব সময় ভয়ংকর।’ জার্মান সরকারের মুখপাত্রের ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সংঘাত উদ্বেগের। সবপক্ষকে ধৈর্য ও বিচক্ষণতা দেখাতে হবে।
সুলেইমানি হত্যায় নিজ দেশেও ট্রাম্পের সমালোচনা হচ্ছে। বিভিন্ন রাজ্যে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। সিনেটের অনুমোদন ছাড়া এ সিদ্ধান্তে বিপদ দেখছে ডেমোক্র্যাটরা। সরাসরি সমর্থন দিলে মিশন বাস্তবায়নে থাকা ইউরোপের দেশগুলোর সেনা ও সাধারণ নাগরিক ঝুঁকিতে পড়বে ভেবেই তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। একই প্রতিক্রিয়া মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের। কুদস বাহিনীর প্রভাবশালী সুলেইমানির নেতৃত্বে মিলিশিয়ারা লেবানন, ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনে শক্ত অবস্থান গড়েছে। ফলে সংকেত পেলে এসব গোষ্ঠী গালফ ও হরমুজ প্রণালীতে যুক্তরাষ্ট্র, তাদের মিত্রদের স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে। সম্ভাব্য আক্রমণের আশঙ্কায় সৌদি আরব প্রতিক্রিয়া দেয়নি। এমনকি গত বছর কয়েকজন ইরানি জেনারেল হত্যায় উল্লসিত যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও এবার নিশ্চুপ। ‘নিউক্লিয়ার ইরান’ বইয়ের লেখক ডেভিড প্যাটরিকারাকাস বলেছেন, ‘এমন প্রেক্ষাপটে তার (যুবরাজ) মতো মানুষ ট্রাম্পকে বারংবার ইরানে হামলার বিষয়ে উৎসাহ দেবে। কিন্তু এখনো নীরবতা রহস্যজনক।’
শুধুমাত্র ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সুলেইমানি হত্যাকে স্বাগত জানিয়েছেন, ‘এমন সফলতার সব কৃতিত্ব ট্রাম্পের। যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থেকে শান্তি, নিরাপত্তা ও নিজস্ব প্রতিরক্ষায় আমরা লড়াই করব।’ তবে তিনিও এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে জনসম্মুখে আলাপ করতে তার মন্ত্রীদের নিষেধ করেছেন। টাইমস বলছে, প্রত্যাঘাতের আশঙ্কা থেকেই এ নিষেধাজ্ঞা। কারণ কুদস সমর্থিত সিরিয়ার মিলিশিয়ারা আগে থেকেই ইসরায়েলের সঙ্গে ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত। লেবাননের হিজবুল্লাহর হাতে ইসরায়েলে আঘাত হানার ১ লাখ রকেট রয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক অফার জালজবার্গ বলেন, ‘ইরানকে পরমাণুহীন না করে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাত্মক যুদ্ধের বিরোধিতা করবে ইসরায়েল। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত কৌশল নিয়ে দেশটি উদ্বিগ্ন।’
এরপরও প্রশ্ন থেকে যায়, ইরান কী করবে? প্যাটরিকারাকাস বলেন, ‘ইরান খুব সাধারণ প্রতিক্রিয়া দেখাবে, কিছুই হবে না। কারণ সুলেইমানি ছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের আক্ষরিক মুখ। কিন্তু এখনো গোটা অঞ্চলে সুন্নিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারপরও যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান বলেই আগ বাড়িয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877